হিন্দি ছিঃনেমা

মেমেন্টো vs গাজনি

হিন্দি বুঝি না, বোঝার চেষ্টাও করিনি কখনও। কেন জানি হিন্দি ফিল্ম দেখাতে ভালও লাগে না। সাবটাইটেল সহ পেলে আমির খানের ছবি দেখি মাঝে মাঝে। দিল চাহ তা হে, লাগান দেখার পর মনে করলাম ওর ছবি দেখা যায়। কিন্তু এই আমিরও যখন হলিউডের কপি করা ছবিতে অভিনয় করে তখন আর তার উপর কেমনে শ্রদ্ধা থাকে? ভাবছেন, আমির খান আবার কপি করা ছবিতে কবে অভিনয় করল? করসে রে ভাই।

ছবির নাম “মেমেন্টো”, পরিচালক “ডার্ক নাইট” আর “ইন্সেপসন” খ্যাত ক্রিস্টফার নোলান। ২০০০ সালের এই ছবির মূল চরিত্রে Guy Pearce যে কি দারুন অভিনয় করসে!! আর গাজনি (২০০৮) [বা একই পরিচালকের তামিল গাজনি(২০০৫)] এই ছবিরই কাহিনি পূরা কপি মারসে। নায়কের শর্ট-টার্ম মেমরি লস, স্ত্রীর ধর্ষন-হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিরামহীন ছুটে চলা, গায়ে উল্কি আঁকা, পোলারায়েড ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা এবং তাতে নোট টুকে রাখা সবই মেমেন্টো থেকে কপি মারা। যদি মেমেন্টো দেখে না থাকেন, গাজনি দেখে থাকলেও আমি বলব এই ছবিটা দেখুন। কারন, “মেমেন্টো”, “গাজনি” থেকে কম করে হলেও এক হাজারগুন ভাল মুভি।

মূল চরিত্র লেনার্ড শেলবি একজন ইন্সুরেন্স ইনভেস্টিগেটর। স্ত্রীর দূর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পাওয়ার পর শুরু হয় তার শর্ট-টার্ম মেমরি লস। মাথায় আঘাত পাওয়ার আগের সব স্মৃতিই তার থাকে, কেবল মাত্র নতুন কোনো স্মৃতি সে তৈরি করতে পারে না। ছবিটা অন্য ছবির মত সামনের দিকে এগিয়ে যায় নি, বরং পিছিয়ে গিয়ে গিয়ে এগিয়েছে। যেন লেনার্ডের চোখেই পরিচালক দেখাতে চেয়েছেন ছবিটা। বেশ কিছু টুইষ্ট আছে ছবিটায়। আর ডায়লগ গুলোও দারুন। ট্রেইলর দেখুনঃ

অনেকেই দেখি বাংলা সিনেমা নিয়া ছিঃনেমা লেখে। বাংলা ছবি নাকি হিন্দি ছবির নকল। তাই বাংলা ছবি দেখা যাবেনা। কিন্তু ভাই, হিন্দি ছবি যে আবার হলিউডের ছবির নকল তা আমরা জানিনা। যাহোক, মেমেন্টো দেখার পরে মেজাজ ভাল হয়ে গেসিল এই ভেবে যে আমির খানও তাইলে কপি করা ফিল্ম করে। আর কি কি মুভি বলিউড কপি করে বানাইসে এইটা দেখার আশায় দিলাম গুগলে সার্চ। যা দেখলাম মাথা পুরা নষ্ট। প্রায় সব সুপার হিট মুভিই দেখা যাচ্ছে কোন হলিউড মুভির নকল। গুগলে পাওয়া আজস্র লিংক থেকে থেকে দুটো আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম, দেখতে ক্লিক করুন  এখানে আর এখানে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ফিল্মের কথা না বললেই নাঃ

Sholay (1975) কপি করা হয়েছে The Magnificent Seven (1960) থেকে। (এইটা নাকি আবার লিজেন্ডারি হিন্দি ফিল্ম, আফসুস!!)
Baazigar (1993) কপি করা হয়েছে A Kiss Before Dying (1991) থেকে।
Daraar (1996) কপি করা হয়েছে Sleeping with the Enemy (1991) থেকে।
Ghulam (1998) কপি করা হয়েছে On the Waterfront (1954) থেকে।
Mohabbatein (2000) কপি করা হয়েছে Dead Poets Society (1989) থেকে।
Munnabhai MBBS(2003) কপি করা হয়েছে Patch Adams(1998) থেকে।
Dhoom(2003) কপি করা হয়েছে The Fast and the Furious (2001)+ TORQUE (2004) থেকে।
Koi Mil Gaya (2003) কপি করা হয়েছে E.T. the Extra-Terrestrial (1982)+Forrest Gump (1994) থেকে।
Hum Tum (2004) কপি করা হয়েছে When Harry Met Sally (1989) থেকে।
Black (2005) কপি করা হয়েছে The Miracle Worker (1962) থেকে।
Sarkar (2005) কপি করা হয়েছে The Godfather (1972) থেকে।
Rang De Basanti (2006) কপি করা হয়েছে All My Sons (1948) & Jesus of Montreal থেকে।
Partner (2007) কপি করা হয়েছে Hitch (2005) থেকে।

এখানে যে কয়টা মুভির কথা বললাম, সব গুলোই কিন্তু সেই রকম হিট। শাহরুখ, আমির আর অমিতাভের মত অভিনেতার অভিনয় করা। বন্ধুদের মুখে কত প্রশংসা যে শুনসি এই মুভি গুলোর।একটা ব্যাপার লক্ষ্য করার মত, ওদের মিডিয়াতে কখনও দেখি নাই যে বলসে এই মুভি হলিউডের অমুক মুভির কপি।সমালোচনা দূরের কথা উলটা প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দিয়ে দর্শকদের সিনেমা হলে যাওয়ার উৎসাহ দেয়ার কাজটি কিন্তু ওদের মিডিয়াই করে।

মানি, আমাদের বাংলা ছবির অবস্থা এখন অত ভাল না। ভারতে ছবি তৈরি হয় ১০০কোটি দর্শকের জন্য, আর আমাদের ছবি তৈরি হয় ১৫ কোটি দর্শকের জন্য। বাজেটের বিশাল একটা তফাৎ তো আছেই, তার উপর আমরা হলাম সিনেমাহল বিমুখ। খুব স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছা করে, আমাদের দেশেও নিয়মিত তৈরি হবে আন্তর্জাতিক মানের বানিজ্যিক ছবি। দেশের মানুষও হিন্দি ছবি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। আবার কখনও কোনো শাহরুখ আসলেও কোনো সোহেল নিজের নাম সাহিল বলে ওই শাহরুখের বগল ধরে নাচবে না।

25 Replies to “হিন্দি ছিঃনেমা”

  1. অসাধারণ পোস্ট! অনেক কৃতজ্ঞতা তৌফিক ভাই ওদের স্বরূপ তুলে ধরার জন্য। আমিও হিন্দি ছবি পছন্দ করি না। টাইম নষ্ট মনে হয় 😀

    আমাদের দেশে কয়েক বছর ধরে ভালো ভালো ছবি হচ্ছে। আরো হবে সামনের দিনে। মুক্তিযুদ্ধে যদি জহির রায়হানের মতো গুনী, মেধাবী চিত্রনির্মাতারা শহীদ না হতেন, খান আতার মতো গুনী লোকেরা আরো কয়েক দিন বাঁচতেন, তবে আমাদের চলচিত্র এতদিনে শক্ত একটা ভীতের উপর দাঁড়িয়ে যেত।

    শুভ কামনা তৌফিক ভাই।

    1. আসলেই ৭১ আমরা যাদের হারিয়েছি তাদের অভাব কোনোদিন পূরন হবার নয়। জাতি হিসেবে আমরা কমপক্ষে একশ বছর পিছিয়ে গিয়েছি। এটাইতো ছিল হানাদারদের পরিকল্পনা।

      পোস্ট ভাল লেগেছে শুনে অনেক ভাল লাগল। উৎসাহ দেবার জন্য ধন্যবাদ।

  2. সুন্দর একটা সত্য কথা তুলে ধরার জন্য অণেক ধন্যবাদ…….এতদিন মুখে বলাতাম যে হিন্দি ইংরেজ থেকে নকল হয়। এখণ অনেক তথ্য ত্ত প্রমা পেলাম। অনেক বিশ্বাস করত অণেক না । এখন কেউ বিশ্বাস না করলে আপনার লিংকটা ধরীয়ে দিব।
    ধণ্যবাদ……..আপনাকে…..

  3. বাংলা, ইংলিশ অংক সব ধরনের ছবিই দেখেছি প্রায় হাজার খানেক। তবে গোটা পঞ্চাশেক মনে হয় আস্তো দেখতে পেরেছি। এমন অনেক ছবি আছে যেগুলো আজকে আমার বাসায় একটু, কালকে বন্ধুর বাসায় আরেকটু পরশু অমুকের বাসায় আরেকটু এরকম সাত-আটবার দেখেও দেখা হয়নি সেই ছবিটা।

    হলিউডী ফিল্ম বরাবরের মতোই ভালো। তবে ভাষাগতো সমস্যার কারণে পুরোটা বুঝতে পারিনা। দেখি তাদের কাহিনি যতোটুকু বুঝি আর প্রযুক্তিগত নির্মাণ শৈলীর গুণে।
    আর হিন্দি তো নিজের চারপাশে চলতেছে। না দেখলেও দেখা হয়ে যায়। এমনিতে খারাপ লাগে না। তবে কমেডী দেখাতে গিয়ে তারা অতিরিক্ত করে ফেলে তাই বিরক্ত লাগে, নকল তো আর আছেই! হিন্দি ছিঃনেমা দেখে পোলাপাইনরা হিন্দি কথা বলে তাই হিন্দি ছবিতে আগ্রহ কম।

    বাংলা সিনেমার কথা আরেক দিন 🙂

    তথ্যগুলো উদ্বৃতী দেবার জন্য উপাদেয় হবে। ধন্যবাদ!

  4. ভাইয়া। জাস্ট স্পীচলেস। অসাধারণ একটা পোস্ট। কী বলে থ্যাংক্স দিবো, বুঝতে পারছিনা। সামনে পেলে পা ছঁয়ে সালাম করতে ইচ্ছে করতাম-এত্ত ভাল্লাগলো লেখাটা পড়ে। ৫তারা, ৫+ এবং শেয়ার করলাম।

    1. তোর ভাল্লাসে জেনে আমারও অনেক ভাল লাগসে।
      মেমেন্টো দেখসস? না দেখলে দেইখা ফালাইস। সেই রকম মুভি। মজার ব্যাপার হইল তুই ছবির মাঝখান থেকেও দেখা শুরু করতে পারিস। বুঝতে সমস্যা হবে না। কেমন জানি একটা সার্কুলার কাহিনী। যেখান থেকেই শুরু করস ছবি একই রকম মজার থাকবে।

  5. হিন্দি-উর্দু তো বুঝিনা! (সবাই বলে দুটোই নাকি একই রকম)… সাবটাইটেল থাকলে দেখি না হলে দেখিনা। আমি ইংলিশ ছবি প্রচুর দেখি সেই অর্থে ভাষা বুঝিনা দেখে হিন্দি দেখা হয়না। তবে ইংলিশ যে ছবিগুলোর নাম দিলেন এখানে সবগুলোই দেখা আমার! আমার অন্যতম প্রিয় ছবি ইটিও দেখলাম লিস্টে আছে! 😀

  6. অসাধারণ লাগল তৌফিক ভাই………সিম্পলি অসাধারণ।

    তবে মেমেন্টো দেইখা আমার মাথা ঘুইড়া গেছিল। এখনও ঠিক হয়নাই।তার উপরে ইনসেপশান আরো ঘুরাইয়া দিছে 😦

    আপনার পুরো লেখার সাথে সহমত। সম্পূর্ণ সহমত।

    1. আসলেই মেমেন্টো অনেক জোস একটা মুভি। ইন্সেপশন দেখি নাই এখনও। 😦 কয়েকদিনের ভিতরেই নেটফ্লিক্স (ডিভিডি ভাড়া নেবার একটা ওয়েবসাইট) থেকে দেখা যাবে। অর্ডার করে রেখসি, কয়েকদিনের ভেতরই হয়ত দেখে ফেলব। নোলানের ডার্ক নাইটও কঠিন লাগসে। নোলান একটা বস লোক।

      পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

  7. আকিরা কুরোসাওয়ার একটা মুভি ছিল সেভেন সামুরাই (১৯৫৪), সে ছবি দেখে দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন (১৯৬০) নির্মাণ করা হয়। ভারতীয়রা এবার সেটা দেখে বানায় শোলে (১৯৭৫)। তাই মনে হয় জাপানী সে পরিচালকই মূল কৃতিত্বের দাবীদার!

  8. তৌফিক ভাই, আমরা কয়েক জন ব্লগার মিলে চলচ্চিত্র নিয়ে একটি ই-বুক করতে যাচ্ছি। এই লেখাটি নিতে চাই, আপনার আপত্তি নাই তো তৌফিক ভাই 🙂 ?

    শুভ রাত্রি 🙂

  9. ২/৩ ঘন্টা ধরে বসে বসে সিনেমা দেখার মত ধৈর্য আমার নেই। খুব বেশি হলে ৩০ মিনিট বসতে পারি তবে কেও অনেক বার বললে দেখি। ব্রেক নিয়ে নিয়ে দেখি। গাজিনি দেখেছিলাম। ভালই ছিল। কিন্তু কপি করেছে এইটা জানতাম না।

তৌফিক হাসান এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল